ক্রিকেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফুটবলে আর্জেন্টিনা!

এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে আর্জেন্টিনা কি ক্রিকেটের ওয়েস্ট ইন্ডিজ? ব্যাপারটা অনেকটা সেরকম! দুটি দলেরই আছে সোনালী অতীত। ক্রিকেটের কলি যুগে রজত্ব করছে স্যার ভিভ রিচার্ডস, ক্লাইভ লয়েড, মাইকেল হোল্ডিং, ম্যালকম মার্শাল, আলভিন কালিচরণ, কোর্টলি অ্যামব্রোস, কোর্টনি ওয়ালশ, জোয়েল গার্নারদের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

একই ভাবে ফুটবল বিশ্বকাপের শুরুর দিকে দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। কাকতালিয়াভাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো সত্তর দশকের শেষ ভাগ থেকে নব্বইয়ের মাঝামাঝি পর্যন্ত দুর্দান্ত দাপট দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা। এর মধ্যে শিরোপা জিতেছে দুবার (১৯৭৮ ও ১৯৮৬)। ১৯৯০ সালে ফাইনাল খেলেছে। ক্যারিবীয়ানরা ক্রিকেটও বিশ্বকাপ (ওয়ানডে) জিতেছে দুবার।

যদিও নিকটর অতীতে তারা দুটি টি-টুয়োন্টি বিশ্বকাপ জিতেছে। কিন্তু ক্রিকেট বিশ্বকাপ বলতে সাধারণ মানুষ এখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপকেই বুঝে।

গুইলার্মো স্তাবিল, মারিও কেম্পেসের পর সেই সৌরভটাকে ছড়িয়ে নিয়ে গেছেন ডিয়াগো ম্যারাডোনা, ভালদানো, বুরুচাগা,ওর্তেগা, ক্লদিও লোপেজরা। এরপর বাতিস্তুতা-ক্যানিজিয়ারা ১৯৯৩ সালে কোপা জিতেছিলেন সেটাই ছিলো আর্জেন্টিনার সর্বশেষ সেরা সাফল্য।

কিন্তু এই প্রজন্মেও আর্জেন্টিনায় একজন আছেন তিনি লিওনেল মেসি। ম্যারাডোনার যোগ্য উত্তরসূরী। কিন্তু ম্যারাডোনার মতো সৌরভ ছড়াতে পারছেন কেই? পারবেনই বা কেমন করে তার যে যোগ্য সঙ্গি নেই। যেমন ছিলো না ওয়েস্ট ইন্ডিজের লারার। মেসি তিনি তো একাই! একাই একটা দূর্গ!
ফুটবলের মুকুটহীন সম্রাট

উইকেটে লারা নেই তো মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজও নেই! একই রকমভাবে মেসি রং ছড়াতে না পারলে আর্জেন্টিনাও সাদামাটা। লারা থাকতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের রাজত্ব অস্তগামী ছিল। যেমনটা হতে যাচ্ছে এখন আর্জেন্টিনার ক্ষেত্রে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ছোট দল গুলোর সাথে হারতে হারতে এখন র‌্যাঙ্কিংয়ের তলানিতে। গত এক বছরের মধ্যে র‍্যাঙ্কিংয়ে অপেক্ষাকৃত নিচের দলের সঙ্গে পরাস্থ হচ্ছে আর্জেন্টিনা। এবারের বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব স্মরণ করে দেখুন। ইকুয়েডরের বিপক্ষে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে মেসি হ্যাটট্রিক না করলে হয়তো ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হতো অন্য কোনো দল। একইভাবে ২০১৯ বিশ্বকাপে জায়গা পেতেও বেগ পেতে হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

এখানেই শেষ নয়। দুটি দলের মধ্যে আরও কিছু মিল রয়েছে। বর্তমানেও দুটি দলে রয়েছে অসাধারণ কিছু প্রতিভাবান প্লেয়ার। বিশ্বের বড় বড় ফ্রাঞ্চইজি ক্রিকেট লিগে দাপটের সাথে খেলছে ক্যারিবিয়ান ক্রিস গেইল, সুনিল নারিন, আন্দ্রে রাসেল, ইভান লুইস, ডোয়াইন ব্রাভোর মতো তারকারা। কিন্তু টিম হিসেব এদের খুব কমই জ্বলে উঠতে দেখা যায়।
ক্রিকেটের বরপুত্র

ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর সেরা সেরা বেশিরভাগ তারকা ফুটবলার আর্জেন্টিনার। বার্সায় প্রাণভোমরা যেমন মেসি, ম্যানচেস্টার সিটিতে আগুয়েরো, রক্ষনে আছে ওটামেন্ডি। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আছে রোহো। জুভেন্টাসের নাম্বার টেন দিবালা সাথে আছে আরেক ফরোয়ার্ড হিগুয়েন। পিএসজির সেরা মিডফিল্ডার ডি মারিয়া ও লো সেলসো। ইন্টার মিলানের সুপারস্টার ইকার্দি। এছাড়া উঠতি তারকা বোকা জুনিয়র্সের পাভন। এরা সবাই নিজ নিজ ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়। কিন্তু টিম হিসেবে বারবরের মতোই নিস্প্রভ।

ক্রিকেটের বয়োবৃদ্ধ ভক্তরা আজও ওয়েস্ট ইন্ডিজের সেই পুরোনো সময়কে মনে মনে ধন্যবাদ জানান, দারুণ কিছু স্মৃতি উপহার দেওয়ার জন্য। ঠিক তেমনি নব্বইয়ের দশকের সুখস্মৃতি আকরে ধরে আর্জেন্টাইন ভক্তরা আজও আশায় বুক বাঁধে সোনালী ট্রফিটাকে আরেকবার উঁচিয়ে ধরার জন্য।

ক্রিকেটের বরপুত্র মুকুটহীন সম্রাট ব্রায়ন লারার মতো কি মুকুটহীন থাকবেন লিওনেল মেসি? আপতত আবহ তাই বলছে। শুভকামনা দুই বিভাগের দুই কিংবদন্তির জন্য। ফিরে আসুক তাদের সুদিন। বিশ্ব ক্রীড়াপ্রেমীরা আবারো উপভোগ করুক ফুটবল-ক্রিকেটের শৈল্পিক সৌন্দর্য।